আজ সোমবার, ১৭ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১লা জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

জনতার ভালোবাসায় সিক্ত পাঞ্জাব বিশ্বাস, উপহার পেলেন টাকার মালা

জনতার ভালোবাসায় সিক্ত পাঞ্জাব বিশ্বাস

জনতার ভালোবাসায় সিক্ত পাঞ্জাব বিশ্বাস

নবকুমার:

ঈশ্বরদী ও আটঘরিয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত পাবনা – ৪ আসন।  রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই আটঘরিয়া অঞ্চলের পরিচয় আজও অজো পাড়া গাঁ হিসেবেই পরিচিতি রয়ে গেছে। এই অঞ্চলে ভালো রাজনৈতিক নেতৃত্ব গড়ে না ওঠায় উন্নয়ন হয়নি তেমন। তবে ৩২ বছর পূর্বে এই অঞ্চলে এক নন্দিত নেতার উত্থান হয়। বাচ্চা বয়সেই সংসদ নির্বাচনের ঘোষনা দিয়ে তিনি চুল পাকা নেতাদের তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন তিনি।

বর্নাঢ্য ছাত্ররাজনীতি জীবনের অধিকারী তৎকালীন সময়ে বৃহত্তর পাবনা জেলার ছাত্র অঙ্গনের মুকুটহীন সম্রাট হলেও ছাত্র অবস্থায়ই তিনি পাবনা-৪ এলাকায় জনগণের আস্থার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিনত হন। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (জাসদ) ইউনিয়ন শাখার সভাপতি সাধারণ সম্পাদক থেকে থানা এবং জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সদস্য হন।
বলছিলাম পাবনা-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য পাঞ্জাব বিশ্বাসের কথা। ঘটনা ১৯৮৬ সাল, পাঞ্জাব বিশ্বাস তখন ২৮ বছর বয়সী টগবগে তরুন যুবক। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে সম্মান সহ স্নানকোত্তর ডিগ্রী এবং একইসাথে আইন ডিগ্রী লাভ করেন।

১৯৮৬ সালে সংসদ নির্বাচনের ঘোষনা এলে তরুন ছাত্রনেতা পাঞ্জাব বিশ্বাস জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঘোষনা দেন। পাঞ্জাব বিশ্বাস নির্বাচনের ঘোষনা দিলে রাজনৈতিক অঙ্গনে অট্টহাসির রোল পরে যায়। বাঘা বাঘা নেতারা তাকে নিয়ে রম্য-রসাত্বক আলোচনায় মেতে ওঠে।

হাসবেই বা না কেন। পাঞ্জাব বিশ্বাস যে দরিদ্র কৃষকের সন্তান। যার ঘরে চাল নেই সে করবে নির্বাচন?
নাহ! দমে যাওয়ার পাত্র পাঞ্জাব বিশ্বাস নয়। অদম্য উদ্যোগে মাত্র কয়েকজন রাজনৈতিক সহকর্মী নিয়ে চষে বেড়াতে শুরু করলেন নির্বাচনী এলাকা। তার সেদিনের বচনভঙ্গি, মহানুভবতা ও মেধার বহিপ্রকাশ দেখে পাবনা-৪ আসনের সাধারন জনগনের বুঝতে অসুবিধা হয়নি পাঞ্জাব বিশ্বাস গরিব মেহনতী কৃষকের নেতা, দিন মজুরের বন্ধু, কাঙালের আপনজন। তবে নির্বাচন মানে তো অনেক টাকা খরচ। লক্ষ লক্ষ টাকার ব্যাপার পাঞ্জাব বিশ্বাসের তো টাকা নেই। আমি আগেই বলেছি পাঞ্জাব বিশ্বাস দরিদ্র কৃষক পিতার সন্তান। নির্বাচন করতে তো অনেক টাকা লাগে, টাকা আসবে কোথা থেকে? কয়েকজন বন্ধু মিলে টাকা জমিয়ে মনোনয়ন পত্র জমা দিলেন।
শুরু হলো নির্বাচনী কার্যক্রম। এটা ১৯৮৬ সালের মার্চ মাসের ঘটনা। ঈশ্বরদী উপজেলার গোয়ালবাথান প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে পাঞ্জাব বিশ্বাস তার ১ম নির্বাচিত জনসভায় বক্তব্য রাখলেন।

তিনি বললেন, আমি দরিদ্র কৃষক পিতার সন্তান। আমার বাবা মাত্র ৫ মাস আগে মারা গেছে। আমার ঘরের চাল দিয়ে বৃষ্টির পানি পড়ে। আমি নির্বাচনী জনসভা করতে এসেছি কিন্তু আমি জানিনা আমার ঘরে হাড়িতে খাবার আছে কিনা। আমার টাকা নাই নির্বাচন করতে অনেক টাকা লাগে। আমি সাহস করে ভোটে দাঁড়িয়েছি, আমাকে ভালোবেসে আপনাদের সেবা করার সুযোগ দিলে সারাজীবন আপনাদের সেবা করব। সেদিনের সেই আবেগঘন বক্তব্যে জনগন তাকে হতাশ করেনি। জনতার ভালোবাসার বিস্ফোরণ ঘটলো, নতুন ইতিহাসের জন্ম হলো।জনসভা চলাকালেই সাধারণ জনতা টাকার মালা পড়িয়ে দিয়ে পাঞ্জাব বিশ্বাস কে সেদিন সাহস দিয়ে বলেছিলো টাকা আমরা দেব তুমি মেহনতি মানুষের বন্ধু ঐ মহান সংসদে দাঁড়িয়ে আমাদের মত গরীব কৃষকদের কথা তোমাকে বলতেই হবে, তুমিই পারবে।
১৯৮৬ সালের নির্বাচনে জনগন নিজেদের উদ্যোগে হারিচাদা তুলে সেদিন লক্ষ লক্ষ টাকা জমা করে তুলে পাঞ্জাব বিশ্বাসের নির্বাচনী ব্যায়ভার বহন করেছিলেন। মাইলের পর মাইল, গ্রামের পর গ্রাম, খেয়ে না খেয়ে পায়ে হেটে তখন মানুষ পাঞ্জাব বিশ্বাসের নির্বাচন করেছিলো। ১৯৮৬ সালের সেই নির্বাচনে পোষ্টার থেকে ভোটকেন্দ্র পর্যন্ত কোথাও চারআনা পয়সাও পাঞ্জাব বিশ্বাসকে খরচ করতে হয়নি। সমস্ত খরচ সেদিন দিয়েছিলেন সাধারণ কৃষক, শ্রমিক, মজুরেরা। পাবনা-৪ আসনের সমস্ত মানুষ সেদিন এক কাতারে এক মিছিলে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলো। পাবনা -৪ আসনে বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম বারেরমত আটঘরিয়া থেকে একজন নেতাকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করে জাতীয় সংসদে পাঠিয়েছিলো। পাঞ্জাব বিশ্বাস জনগনের টাকায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে এই জনতাকে উপেক্ষা করে যাননি।
১৯৮৬ সালের সেই সংসদে মাত্র ১৮ মাস এমপি থাকাকালীন তিনি তার নির্বাচনী এলাকায় শিক্ষার প্রসারে বহু স্কুল কলেজ প্রতিষ্ঠা ও পৃষ্ঠপোষকতা করেন। ঈশ্বরদী দাশুড়িয়ায় অবস্থিত যে পাবনা সুগার মিলটি রয়েছে তা তারই অবদান। তিনি তৎকালীন “৭৬ মডেলের” শ্যালো ইঞ্জিনের যে জুলুমের ঋণ কৃষকের উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিলো তা মওকুফ করিয়েছিলেন। মাত্র ২৮ বছর বয়সে বাচ্চা ছেলেটিই সেদিন গরিব মেহনতী মানুষের পক্ষে মহান সংসদ প্রকম্পিত বক্তব্য দিয়ে দেশের সকল দলের নেতাদের আগ্রহের কেন্দ্র বিন্দুতে পরিনত হয়েছিলেন। এরপর কেটে গেছে ৩০ টি বছর। রাজনৈতিকভাবে নিপীড়নের শিকার হয়েছেন পাঞ্জাব বিশ্বাস। উনত্রিশ বছর বয়সে অবিভক্ত জাসদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হলেও জাসদের ভ্রান্ত রাজনীতির কারনে কিছুদিন রাজনীতিতে প্রায় নিষ্ক্রিয় থাকার পর ২০০২ সালে তার পারিবারিক রাজনৈতিক দল বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সংগঠন আওয়ামীলীগ এর রাজশাহী বিভাগীয় কর্মী সমাবেশে বিপুল পরিমান নেতাকর্মীসহ আওয়ামীলীগ এ যোগদান করেন । বর্তমানে তিনি পাবনা জেলা আওয়ামীলীগের উপদেষ্টা সদস্যের দায়িত্ব পালন করছেন।
আওয়ামীলীগে যোগদানের পর থেকে স্থানীয় নেতারা তাকে দলীয় কাজে পদে পদে বাধা সৃষ্টি করতে থাকে, বিভিন্ন দলীয় কর্মসূচীতে তাকে বিরত রাখা হয়েছে পরিকল্পিত ভাবে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে তিনি মনোনয়ন চাইলে জননেত্রী শেখ হাসিনা তাকে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান করার প্রতিশ্রতি দিয়ে পাবনা-১ জামায়াতে ইসলামী আমির মতিউর রহমান নিজামীর বিপক্ষে আওয়ামীলীগে শামসুল হক টুকুর নির্বাচনী কাজে অংশগ্রহনের জন্য বলেন পাবনা-১ আসন জামাতের ঘাটি হিসেবে চিহ্নিত হলেও ২০০৮ সালের নির্বাচনে পাঞ্জাব বিশ্বাসের কৌশলের কাছে পরাজিত হয় স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি জামাতের প্রার্থী।

পুরস্কার স্বরুপ জেলা পরিষদ নির্বাচনে পাঞ্জাব বিশ্বাসের নাম শোনা গেলেও পরে অদৃশ্য কারনে তা হয় নি। ২০১৪ সালে বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করায় সেবার নির্বাচন করা সম্ভব হয়নি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে আবারো উত্তাল পাবনা-৪ আসনের রাজনৈতিক অঙ্গন। এই আসনের বর্তমান সাংসদ ভূমিমন্ত্রীর সেচ্ছাচারীতা ও সীমাহীন দূর্ণীতির কারনে এই আসনে আওয়ামীলীগ এর অবস্থা খুবই নাজুক।

এই অবস্থা থেকে উত্তরণের লক্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে নির্বাচনী এলাকায় জনগণের কাছে বর্তমান সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ড প্রচারে “জয় বাংলা মঞ্চ” নামের একটি সংগঠনের ব্যানারে গণসংযোগ ও উঠান বৈঠকে নামেন পাঞ্জাব বিশ্বাস। তিনি মাঠে নামার সাথে সাথেই নেতাকর্মীদের মাঝে প্রাণ ফিরে আসে। তৃনমূলে অবহেলিত আওয়ামীলীগ নেতা কর্মীরা পূর্ণোদ্দমে তার সাথে গণসংযোগ, ঊঠান বৈঠক ও পথসভায় অংশগ্রহন করতে শুরু করেন।

পাাঞ্জাব বিশ্বাস গত ২০ জুন তারিখে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন কর্মকান্ড তুলে ধরতে মোটর শোভাযাত্রার ঘোষনা দিলে নিজ নিজ উদ্যোগে কয়েক হাজার নেতাকর্মীরা প্রায় দেড় হাজার মোটরসাইকেল নিয়ে শোভাযাত্রায় অংশগ্রহন করে। যা ছিলো পাবনার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় মোটরশোভাযাত্রা। এদিন শোভাযাত্রার পূর্বে নিজ গ্রাম দর্গাবাজারে এক পথসভায় ঈশ্বরদী-আটঘরিয়ার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা নেতা কর্মী ও সাধারণ জনতা পাঞ্জাব বিশ্বাস কে পাবনা-৪ আসনের নিরাপদ নৌকার যোগ্য মাঝি ঘোষনা দিয়ে তার হাতে প্রতিকী নৌকা প্রতীক তুলে দেয়। এসময় তারা পাঞ্জাব বিশ্বাস কে নৌকার মনোনয়ন দিতে জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আহবান জানায়।

পাঞ্জাব বিশ্বাস প্রায় প্রতিদিনই নিজ নির্বাচনী এলাকায় “জয় বাংলা মঞ্চ” এর ব্যানারে “জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়নে, বঙ্গবন্ধুকন্যা বিশ্বনেত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে নৌকার পক্ষ নিন” স্লোগানে পাবনা-৪ আসনের বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ, উঠান বৈঠক ও পথসভা করছেন। এলাকায় গণসংযোগকালে শতশত নেতাকর্মীরা স্বপ্রনোদিত হয়ে প্রায় বিপুল পরিমান মোটরসাইকেল নিয়ে অংশগ্রহন করছেন। পথসভাগুলোতে নামছে জনতার ঢল।

গণসংযোগ ও পথসভার ধারাবাহিকতায় আটঘরিয়া উপজেলার ভরতপুর স্কুলমাঠে “জয় বাংলা মঞ্চ” আয়োজিত পথসভায় কয়েক হাজার জনতার মাঝে বক্তব্য প্রদানকালে ঐ গ্রামের বয়োবৃদ্ধ আঃকরিম, কৃষক ফজর আলী, আঃসাত্তার সহ বেশ কয়েকজন ব্যক্তি জননেতা পাঞ্জাব বিশ্বাস কে টাকার মালা পরিয়ে দিয়ে এক অনন্য ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটালেন। এ যেন ১৯৮৬ এর রুপান্তর হলো ২০১৮ তে। অবাক বিস্মৃত জনতার মাঝে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন জননেতা পাঞ্জাব বিশ্বাস। তিনি ৩২ বছর পূর্বে ফেলে আসা হারানো অতীত ফিরে পেয়ে ফিরে পেয়ে অঝড়ে চোখের জল ফেলতে থাকেন। পথসভায় পাঞ্জাব বিশ্বাস পুরোনো স্মৃতি স্মরণ করে জননেত্রী শেখ হাসিনা মনোনীত প্রার্থীকে নৌকায় ভোট দিয়ে বিজয়ী করার আহবান জানান।

সময় কেটেছে অনেক তবে ভালোবাসা যে এতটুকুও কমে নি তা কি আর বুঝতে বাকি নেই? পাবনা-৪ আসনে সমগ্র এলাকায় সর্বস্তরে রয়েছে পাঞ্জাব বিশ্বাসের গ্রহনযোগ্যতা। দলমত নির্বিশেষে তিনি আদর্শ এবং আস্থার প্রতীক। এই আসনের জনতা আজ জাগ্রত হয়েছে সৎ, জনদরদী নেতা ও কৃষকের সন্তান পাঞ্জাব বিশ্বাস কে সামনে নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মুখের দিকে চেয়ে আছে নৌকার পক্ষে একটি বিশাল গণবিষ্ফোরন ঘটানোর প্রস্তুতি নিয়ে।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ